চিত্রকলা ও এছলাম

চিত্রকলা ও এসলাম

অবিভক্ত বাংলার সাংবাদিকতার পথিকৃত, মুসলিম চিন্তানায়ক মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর একটি অবিস্মরণীয় উক্তি ছিল— ‘যাহা ইসলাম, তাহা অচল নহে; আর যাহা অচল, তাহা ইসলাম নহে।’ ইসলামে ছবি তোলা ও চিত্রকলার অনুমোদন সম্পর্কে গবেষণাধর্মী এক আলোচনার পর তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন।

ছবি তোলা, চিত্র অঙ্কন, ভাস্কর্য নির্মাণ এবং ছবিযুক্ত কাপড় ও অন্যান্য বস্তু দৈনন্দিন ব্যবহারের আওতায় আনা— ইত্যাদি বিষয়কে ঠুনকো চিন্তার ভিত্তিতে হারাম বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে আমাদের সমাজে। আলেমগণের মাধ্যমেই এ ধরনের বিশ্বাস সমাজে লালিত হয়ে আসছে। অপর দিকে সমাজের ইসলাম বিমুখ একটি অংশের প্রচারণা ছিল— যেহেতু আধুনিক জীবন নানাবিধ চিত্রকর্ম দ্বারা বিজড়িত ও শোভিত, আর ইসলামে এ সবকিছুই হারাম— অতএব এ যুগে ইসলাম অচল।

এই দ্বিবিধ সমস্যার সমাধান এবং সমাজে জেঁকে বসা কিছু ভ্রান্তি নিরসনে গবেষণার মাধ্যমে মাওলানা আকরম খাঁ দেখিয়েছেন যে, সকল ছবি বা চিত্রকলাই ইসলামে হারাম নয়। রাসূল (সা.)-এর হাদীস ও সাহাবীগণের জীবন পর্যালোচনা করে তিনি প্রমাণ করেন, পূজা-উপাসনা বা শ্রদ্ধা-সম্মানের উদ্দেশ্যে যেসব চিত্র কিংবা মূর্তি বানানো ও ঝুলানো হয়, তা ব্যতিত বৃক্ষ-তরুলতা, জড়বস্তু, প্রাণীর ছবি এমনকি মানুষের ছবি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ইসলাম নিষেধ করেনি। ইসলাম সর্বকালেই আধুনিক ও সচল। কোনো কালেই অচল নয়, বরং সর্বকালের সেরা জীবন ব্যবস্থা হলো ইসলাম। ইসলামের নির্দেশনা মেনে আধুনিক শিল্পকলা, চিত্রকলা, ক্যালিগ্রাফিসহ আর্ট-কালচারের সব ধরনের সুবিধা গ্রহণ করে ভারসাম্যপূর্ণ সুন্দর জীবনধারা অবলম্বনই মুসলিমদের দায়িত্ব।

শিল্প-সাহিত্য, চিত্রকলা, সঙ্গীতকে বর্জন করে নয় বরং এসব জীবনোপকরণকে ইসলামের সীমার মধ্যে ব্যবহার করেই গড়ে তোলা যায় দৃষ্টিনন্দন সুসংস্কৃত ‍উন্নত মুসলিম সমাজ। মুসলিম জ্ঞান-সাধক মাওলানা আকরম খাঁর গবেষণাধর্মী বই ‘চিত্রকলা ও এসলাম’ জ্ঞানপিপাসুদের পিপাসা মেটাতে সাহায্য করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।